
এক গ্রামে ছিল সাত বন্ধু। তারা কখনও কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারতনা। যে কোন কাজই তারা হাসি-তামাসার মধ্য দিয়ে, গুরুত্ব না দিয়ে করত। যার ফলে কোন কাজই ঠিকমত সম্পন্ন হতনা শেষ পর্যন্ত।
গ্রামের লোকেরা তাদের ডাকত ‘লুম্বোওয়াইং হইয়। লুকেমওয়াইং মানে সঙ। খৃহ্নইয় মানে সাতজন। অর্থাৎ তাদেরকে ডাকা হত সাতজনসঙ বলে।
তারা একদিন শাক-সবজি ও ফলমূল যোগাড় করার জন্য দূর বনে গেল। বনে বাঘের উৎপাত ছিল খুব বেশি। তবুও তারা বেশ কিছু শাক-সবজি যোগাড় করতে পারল নিরুপদ্রবে।
যখন তারা গ্রামে ফিরে আসতে লাগল । সবাই ভাবতে লাগল, আচ্ছা তাদের কাউকে বাঘ ধরে নিয়ে যায়নিতো? একটুগণনা করে দেখা দরকার, তারা কয়জন আছে।
একজন লুম্বোওয়াইং গণনা করে দেখল। কিন্তু গণনার সময় সে নিজেকে বাদ দিল। এ কারণে সে পেল ছয়জন। তখন সে বলল, “আরে ভাইসব, আমাদের ভেতর থেকে একজনকে বাঘ ধরে নিয়ে গেছে।
আমরা শুধু ছয় জনই ফিরে এসেছি।” তখন অন্য একজন গণনা করে দেখল । কিন্তু সেও নিজেকে বাদ দিয়েছে। এতে সেও ছয় জনই পেল। এভাবে তাদের প্রত্যেকেই গণনা করে দেখল, তারা ছয়জনই রয়েছে।
একজন গেছে বাঘের পেটে। যেতে যেতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল। তারা সামনের একটা গ্রামে ঢুকে পড়ল। আর একটা বাড়িতে গিয়ে দেখল দুইজন বুড়ো-বুড়ী আছে ভেতরে। তারা বুড়োটার কাছে গিয়ে বলল, “দাদু, আমরা অনেকদূর থেকে এসেছি। বনে গিয়েছিলাম।
কিন্তু ফিরে আসতে রাত হয়ে গেল । যদি আমাদেরকে তোমার বাড়িতে আজকের মত থাকতে দাও, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।” বুড়োটাও তাদের কথায় রাজি হল।
বুড়োটাকে বলল, “আমরা সাতজন ছিলাম। ফিরে আসার ময় দেখি ছয়জন আছি। আমাদের একজনকে নিশ্চয় বাঘ খেয়েছে। তাদের একথা শুনে বুড়োটা গণনা করে দেখল, তারা সাতজনই আছে। তখন বলল,”আরে, তোমরা তো সাতজনই আছ।”
তখন তার অবাক হয়ে বলল, “আরে তা-ই নাকি? আমরা এত করে গণনা করলাম, তবুও ছয়জনই হয়। আমাদের গণনার মধ্যে নিশ্চয় কোন ভুল ছিল। তারা ঐ বুড়োটার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া সেরে বন থেকে সংগ্রহ করা শাক-সবজি আর ফলমূলগুলো ভাগ করতে বসল।
কিন্তু তারা সেগুলো ভাগ করল আট ভাগে। একারণে প্রত্যেকে নিজের ভাগ পাবার পরও একটা ভাগ অবশিষ্ট থেকে গেল । এভাবে বারবার ভাগ করার পরও একটা অতিরিক্ত ভাগ থেকে গেল।
তখন তারা ঐ ভাগটা নিয়ে কি করবে ভেবে পেলনা। তখন বুড়োটা এসে সমস্যার সমাধান করে দিল। সে ঐ অতিরিক্ত ভাগটা নিল।
ঐ সাতজন দেখল যে, তাদের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে, তখন তারা খুশি হয়ে বুড়োটাকে বলল,” দাদু তোমার বুদ্ধিতে আমরা খুব খুশি হয়েছি। তুমি আমাদেরকে তোমার ইচ্ছামত যে কাজ করতে বলবে, আমরা তা-ই করব।” এই বলে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন ভোরবেলা তাদের কথামত বুড়োটা বলল,” এই যে ছেলেরা, তোমরা আমার জমি থেকে ধানগুলো কেটে বাড়িতে নিয়ে এস।” এই বলে তার জমিটা তাদেরকে দেখিয়ে দিল।
বুড়োর জমিতে গিয়ে তারা সারাদিন ধান কাটল। সন্ধ্যার পর তারা প্রত্যেকে প্রচুর ধান নিয়ে বুড়োর বাড়িতে ফিরে এল। তখন আবার বুড়োটা বাড়িতে ছিলনা। কোন কাজে বাইরে গিয়েছে।
তাদের সামনে পড়ল বুড়ীটা। তারা জিজ্ঞেস করল, “দাদী, এই ধানগুলি কোথায় রাখব ?” বুড়ীটার মেজাজ ছিল খিটখিটে । সব সময় রেগেমেগে থাকত। উত্তর দিল, “এটাও আবার বলে দিতে হবে? আমার মাথায় রাখ।”
তখন ঐ সাতজন লুম্বোওয়াইং ধান গুলি বুড়িটার মাথার উপর ফেলে দিল। বুড়িটা ধানের চাপে একেবারে চ্যাপ্টা হয়ে গেল। তারা বুড়োকে খুঁজে বের করার জন্য বের হল।
পথে যেতে যেতে এক জায়গায় গিয়ে দেখা হল তার সাথে। তারা বলল, ”দাদু, আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি। দাদী বলল, ধান গুলো তার মাথায় রাখতে, আর আমরা তা-ই করলাম।”
তখন বুড়োটা বলল, “আরে, তোমরা করেছটা কি? এতক্ষণে নিশ্চয় মরে পড়ে আছে।” বাড়িতে গিয়ে দেখল বুড়ো যা ভেবেছে তা-ই। বেচারা বুড়োটা কিছুক্ষণ বসেবসে বিলাপ করল, “কি আর করা? যা হবার তা’ হয়ে গেছে।”
সকাল হতেই বুড়ির মৃতদেহটা একটা মাদুরে মুড়িয়ে ঐ সাতজনকে পাঠিয়ে দিল বুড়োটা কবর দেবার জন্য। তারা চলল কবর দিতে।
কিন্তু যেতে যেতে ঐ মাদুরের খোল থেকে মৃতদেহটা মাটিতে পড়ে গেছে, তারা টেরই পেলনা। তারা ঐ খালি মাদুরের বান্ডিলটাই সাতজনে মিলে কাঁধে করে নিয়ে গেল শ্মশাণে।
ঐ মাদুরটাকে তারা কবর দিয়ে ফিরে আসতে লাগল। কিন্তু তারা দেখল রাস্তায় আরেকটা মৃতদেহ পড়ে আছে। বুড়ির মৃতদেহকে তারা চিনতেই পারল না।
বাড়ি ফিরে এসে বুড়োকে বলল, “দাদু, তোমার বুড়িকে কবর দিয়ে ফিরে আসার সময় আমরা রাস্তায় একটা মৃতদেহ দেখে এসেছি।” তাদের একথা শুনে বুড়োটার মনে সন্দেহ জাগল।
তাড়াতাড়ি তাদেরকে নিয়ে ঐ জায়গাটায় গিয়ে দেখল, মৃতদেহটা তার বউ-এর। তখন বলল, ”আরে তোমরা তো খেয়াল করনি তোমাদের দাদির মৃতদেহটা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।”
তখন সাতজন লুম্বোওয়াইং বেশ অবাক হল। তারা সবাই মিলে মৃতদেহটাকে আবার কবর দিয়ে ফিরে এল। ঐদিনই তারা নিজেদের বাড়ির পথ ধরল। এভাবে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে পৌছে গেল।
অন্য একদিন তারা আবার ঠিক করল, বনে গিয়ে খুব বড় একটা গাছ কাটবে। আর ঐ গাছটা খোদাই করে একটা বড় নৌকা বানাবে। ঐ নৌকা দিয়ে তারা বিদেশ ভ্রমণে যাবে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ।
তারা দা, কুড়াল, করাত আর খাবার দাবার নিয়ে রওনা হয়ে গেল বনে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খোঁজ করে তারা তাদের পছন্দ মত একটা গাছ পেয়ে গেল। তারা শলা-পরামর্শের জন্য বসে গেল কিভাবে গাছটা কাটা যায়?
এক পর্যায়ে ঠিক হল, একজন গাছের আগায় উঠে বসে সুর করে শিস্ দিতে থাকবে যেন, বাতাস ঠিক মত আসে। তাদের বিশ্বাস সুর করে শিস বাজালে জোরে জোরে বাতাস বইবে।
এতে গাছ কেটে মাটিতে ফেলতে সহজ হবে। একজন উঠে গেল গাছের একেবারে আগায়। আর পাঁচজন গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াল যেদিকে গাছ ভেঙ্গে পড়বে। গাছ ভেঙ্গে পড়লেই তারা কাঁধ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখবে।
যেন মাটিতে পড়ে গিয়ে গাছের কোন ক্ষতি না হয়। আর একজন কুড়াল ধরে গাছের গোড়া কাটতে লাগল গান গাইতে গাইতে।।
কিছুক্ষণ চলল এরকম গাছকাটা। এভাবে কিছুক্ষণ কাটার পর গাছ ভেঙ্গে পড়ল । কিন্তু দেখা গেল গাছের আগায় বসা লুম্বোওয়াইংটাসহ গাছের নিচে কাঁধ ঠেকিয়ে দাড়ানো পাঁচজনই মরে গেল গাছের চাপে।
তাদের সমস্ত শরীর কেটে ছিড়ে গেল আর মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। নিচে কুড়াল দিয়ে গাছ কাটা লুম্বোয়াইংটা কিন্তু কাজ শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল। তারপর উঠে গিয়ে দেখল যে, তার ছয়জন বন্ধু ঘুমিয়ে পড়েছে পান খেয়ে।
কারণ তাদের ঠোটগুলো লাল দেখা যাচ্ছে। সে মনে করল তার উপর কাজের সব দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে পান খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সে কিছুক্ষণ তাদেরকে ধাক্কাধাক্কি করে ডাকল। কোন সাড়া না পেয়ে তাদের একজনের মুখ থেকে কিছু রক্ত নিজের ঠোটে মেখে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণ পর সেখানে এসে হাজির হল হাতির পিঠে চড়ে একজন লোক। সে দেখতে পেল, এক জায়গায় সাতজন লোক মরে পড়ে আছে। যেহেতু সবার মুখেই রক্ত লেগে আছে, সে কারণে ঐ লোকটি জীবিত লুম্বোওয়াইংকেও মৃত মনে করল।
তারা সত্যিই মারা গেছে কি-না যাচাই করা জন্য হাতির পিঠ থেকে নেমে এল। তার হাতে ছিল হাতির মাথায় খোঁচা দেবার তীক্ষ্ণ লোহার দন্ড। সে ঐ দন্ড দিয়ে লুম্বোওয়াইং সাতজনের প্রত্যেকের গায়ে আস্তে আস্তে খোঁচা মেরে দেখল। সাতজনের মধ্যে ছয়জনই নিথর।
কিন্তু যে লুম্বোওয়াইংটা জীবিত, তাকে সামান্য খোচা দিতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। এতে ঐ লোকটি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি বলল, “তুমিতো মরে গেছ। আবার কিভাবে জীবিত হয়ে উঠলে?”
এ কথা শুনে সে অবাক হয়ে বলল, “তাই নাকি? আমি যে মারা গেছি তাতো জানতাম না! তোমার লোহার দন্ডটার মধ্যে নিশ্চয় কোন যাদু আছে। এ কারণেই আমি বেঁচে উঠেছি। এই জিনিসটা ভাই আমাকে দিয়ে দাও।”
এই বলে সে লোকটার কাছ থেকে লোহার দন্ডটা চেয়ে নিল। এরপর হাতিওয়ালা লোকটা যখন চলে গেল, তখন সে তার বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলল, “তোমরা পান খেয়ে এখানেই শুয়ে থাক। আমি চললাম।”
এবার সে ঠিক করল দেশ ভ্রমণে যাবে। আর যত মৃতলোক পাওয়া যাবে তার যাদুরদন্ড দিয়ে মৃতদের জীবিত করে তুলবে। এভাবে সে হাঁটতে হাঁটতে একটা শহরে গিয়ে ঘুরে বেড়াল কিছুক্ষণ।
একসময় এক রাজ প্রাসাদের সামনে চলে এল। শুনতে পেল রাজ প্রাসাদের ভিতর থেকে কান্নাকাটি আর বিলাপের শব্দ। সে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারল যে, রাজার একমাত্র কন্যা রাজকুমারী মারা গেছেন।
এ জন্যেই সবাই মিলে বিলাপ করছে। লুম্বোওয়াইংটা ভাবল, এখন কি করা যায়? খিদেও লেগেছে খুব। কিছুক্ষণ পর সে সোজা রাজ প্রাসাদে ঢুকে গেল। রাজার নিকট প্রণাম করে হাজির হল।
বলল, “আমাকে মৃত রাজ কন্যার চিকিৎসা করার সুযোগ দিন। আমি মৃত মানুষকে জীবিত করে তুলতে পারি।” রাজা তার অদ্ভুত কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন।
তবে জীবিত করে তুলতে পারলেও পারতে পারে, এই ভেবে তাকে মৃত রাজ কন্যার চিকিৎসার জন্য নিয়োগ করলেন। সে তখন রাজ কন্যার মৃত দেহের চারিদিক সাতটি পর্দা দিয়ে বৈষ্টিত করল।
আর তার ভিতর গিয়ে হাতিওয়ালার কাছ থেকে পাওয়া ঐ লোহারদন্ড দিয়ে খোঁচা দিতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলনা। এভাবে খোঁচাতে খোঁচাতে রাজ কন্যার মৃত দেহটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। কিন্তু এতেও সে ক্ষান্ত হলো না।
অনেকক্ষণ কেটে গেল। তবুও লুম্বোওয়াইংটা পর্দার ভিতর থেকে বের হচ্ছে না দেখে সবার মনেই সন্দেহ জেগে উঠল। তখন সবাই পর্দার ভিতর গিয়ে দেখল, জীবিত হওয়াতো দূরের কথা রাজ কন্যার চেহারাটাই চেনা যাচ্ছেনা।
আর ঐউন্মাদটা তখনও লোহার দন্ড দিয়ে খোচাচ্ছে। তখন উপস্থিত সবাই রেগে গিয়ে তাকে পেটাতে লাগল। কয়েকজন তাকে লাথি মেরে বলল, “তুই এ ধরনের কাজ কেন করেছিস ?”
তখন সে ভয় পেয়ে বলল,“ভাই খিদের চোটে আমার বুদ্ধি -শুদ্ধি লোপ পেয়েছে। একারণেই হয়তো কাজটা করেছি। আমাকে মাফ করে দাও, ভাই।
তখন লোকগুলো তাকে বলল, তোর যদি এতই খিদে লেগে থাকে, তাহলে আমাদের সাথে এখানে কান্নাকাটি করলেই পারিস। খাবার সময় হলেই রাজা সবাইকে খাওয়াবে, তখন তুইও খেতে পাবি। এই বলে তারা তাকে রাজ প্রাসাদ থেকে তাড়িয়ে দিল।
এবার সে মনের দুঃখে লোহার দন্ডটি খুঁড়ে ফেলে দিল। আবার হাঁটতে হাঁটতে সে অন্য এক বাড়ির সামনে পৌছল আর দেখল যে,সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়ে আনন্দে হৈচৈ করছে।
সেখানে সে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারল, ঐ বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান, এ জন্যই এত আনন্দ। তার মনে পড়ে গেল রাজবাড়ির লোকজনের বলা কথাগুলো। বাড়ির লোকজনের সাথে কান্নাকাটি করতে হবে।
তবেই তারা তাকে খাবার দেবে। আর যায় কোথায় ? সে ঐ বাড়িতে ঢুকেই কানফাটানো উচ্চস্বরে এমন মরাকান্না জুড়ে দিল যে বাড়ির সবাই হকচকিয়ে উঠল।
তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোন আক্কেলে এমন আনন্দের জায়গায় এসে কান্নাকাটি করে সবার মন খারাপ করে দিচ্ছ? সে তখন উত্তর দিল,” ভাই খিদের জ্বালায় আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। তাই কিছু বুঝতে না পেরে কান্নাকাটি করে ফেলেছি।”
ঐবাড়ির লোকজন তখন তাকে বলল, “তোমার যদি খিদে লেগে থাকে তাহলে আমাদের সাথে হৈ-হুল্লোর করে আনন্দ করলেই পারতে। কিছুক্ষণ পর খাওয়ার সময় হলেই আমরা তোমাকে খাওয়াতাম।
এখন যাও, আমাদের সবার আনন্দ তুমি মাটি করেছ। এজন্যে তোমাকে কিছুই খাওয়ানো হবেনা।” এই বলে তারা লুম্বোওয়াইংটাকে তাড়িয়ে দিল। এখানেও খাবার জুটলনা দেখে সে মনের দুঃখে বনে গেল ঘুরে বেড়াবার জন্য।
সে কিছুক্ষণ পর এক জায়গায় দেখল, একজন লোক ঝোপের আড়ালে বসে আছে। আসলে লোকটা ছিল একজন হরিণ শিকারী। সে একটা হরিণ ধরার ফাঁদ পেতেছে। আর একটা হরিণ তার ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে দেখে কোন শব্দ না করে চুপচাপ বসে আছে।
এখন ঐ লুম্বোওয়াইংটার মনে পড়ে গেল বিয়ে বাড়ির লোকজনের বলা কথাগুলো। ভাত খেতে হলে তাদের সাথে গিয়ে হৈ-হুল্লোর করে আনন্দ করতে হবে। তখনই তখন সে গ্রামের বাইরে গিয়ে দেখল, একটা মাঠে দুটো ষাঁড়।
দুটোর মাঝখানে এসে দাঁড়াল তাদের ঝগড়া মিটিয়ে দেবার জন্য। আর যায় কোথা?সে হরিণ শিকারীর পাশে গিয়ে তালি বাজিয়ে এমন ভাবে চিৎকার করে আনন্দ-উল্লাস করতে লাগল যে, হরিণটি পালিয়ে গেল।
আর ঐ হরিণ শিকারী লোকটি রেগে গিয়ে তাকে চড়-থাপ্পর মেরে বলল,” হারামজাদা, আমার হরিণটাতাড়িয়ে দিলে কেন?”তখন লুম্বোওয়াইংটা উত্তর দিল, “ভাই খিদেয় আমার পেটটা চো-চো করছে।
খিদের জ্বালায় কাজটা করে ফেলেছি।” লোকটি তখন বলল,“তুমি খেতে চাওতাে চুপ-চাপ এসে আমার সাথে বসে থাকলেই পারতে। হরিণ। যদি ধরা পড়ত তাহলে আমি বাসায় নিয়ে গিয়ে তোমাকে খাওয়াতাম। এখনতো দেখি তোমার কারণেই। হরিণটা হাতছাড়া হয়ে গেছে। এ কারণে তোমাকে খাওয়াবো না।”
এরপর সে বনের পাশের গ্রামে ঢুকে পড়ল। কিছুক্ষণ হাঁটা-চলা করার পর এক বাড়ির পাশে। এসে দাঁড়াল। তখন সে শুনতে পেল ঐ বাড়ির ভিতর দুইজন বুড়োবুড়ী চিৎকার, চেঁচামেচি আর গালিগালাজ করে ঝগড়া শুরু করেছে।
তখন আবার তার মনে পড়ে গেল হরিণশিকারীর বলা কথা। সে বলেছিল তার সাথে চুপ-চাপ বসে থাকতে। লুম্বোওয়াইংটা চুপিচুপি বাড়ির বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঝগড়ার স্বামী স্ত্রীকে দেখতে লাগল লুকিয়ে লুকিয়ে।
এ দিকে ঐ বাড়িতে হট্টগোল শুনে আশ-পাশের লোকজন ছুটে এল ব্যাপারটা কি তা দেখতে। তারা দেখতে পেল, একজন লোক লুকিয়ে লুকিয়ে মজা দেখছে।
কিন্তু ঐ বুড়োবুড়ীর মারামারি থামিয়ে ঝগড়া মিটমাট করে দিচ্ছে না। তখন গ্রামবাসীরা তার উপর ক্ষেপে গেল। তারা রেগে গিয়ে লুম্বোওয়াইংটাকে ধরে আনল এবং গণপিটুনি দিয়ে বলল, ”এদিকে দুজনে মারামারি করে রক্তারক্তি কান্ড ঘটাচ্ছে আর তুমি লুকিয়ে মজা দেখছ।
এরকম কাজ তুমি কি জন্য করছ?”তখন সে বলল,”আমি ভাই খিদের জ্বালায় অস্থির। তাই কিছু খেতে পাবার আশায় কাজটা করেছি।”
তখন গ্রামের লোকজন তাকে বলল, “এরকম ঝগড়া ঝাটি হলে তাদের মাঝখানে গিয়ে ঝগড়া মিটিয়ে দিলেই তো হয়। তারা খুশি হয়ে তোমাকে খাওয়াতো।
এখন তোমার কারণেই দু’জন মানুষের আধমরা অবস্থা। তোমাকে কিছুই খাওয়ানো হবেনা।” এই বলে তাকে তাড়িয়ে দিল। দু’টো ষড়ই ছুটে এল। আর সে দুটো ষাঁড়ের শিং-এর মাঝখানে পড়ে গেল। তার ভবলীলা সাঙ্গ হল এভাবেই।
লেখকঃ মং সিং ঞো