
অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিল এক রাজা। রাজার ছিল এক রাজকন্যা।আর এক দেশে ছিল এক গরীব রাজপুত্র। বিধবা মাকে রেখে রাজপুত্র লেখাপড়া করতে গেল দূরবর্তী পাঠশালায়।
লেখাপড়া করার প্রায় শেষ দিকে সে শুনতে পেলযে, অন্য এক দেশে রাজা তার কন্যাকে যে কোন ভাল পাত্র পেলে তার সাথে বিবাহ দেবে। এদিকে খবর পেয়ে রাজপুত্র তার মাকে বলে দিল, সে সেখানে যাবে, কিন্তু রাজপুত্রকে তার মা যেতে বাধা দিল।
কারণ তারা গরীব, আর রাজা তো ধনী। কিন্তু এদিকে রাজপুত্র মায়ের কথা মানল না। সে সেই দেশের দিকে রওনা দিল। আর সে মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিল। তার মাও তাকে আর্শীবাদ দিয়ে বিদায় দিল।
যেতে যেতে সে পথে ক্লান্ত হয়ে এক বটগাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়ল। যখন রাজপুত্রের ঘুম ভাঙল তখন রাত হয়ে গেল। সে বটগাছে রাক্ষসও ঘুমাতে আসল।
রাজপুত্রকে দেখে রাক্ষস মেরে ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিল। আর রাজপুত্রও রাক্ষসের সাথে লড়বার জন্য প্রস্তুতি নিল। এক সময় তারা মল্লযুদ্ধে নেমে পড়ল।
রাক্ষস রাজপুত্রের কাছে যুদ্ধে হেরে গেল। আর রাজপুত্র যখন রাক্ষসকে মেরে ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিল, এমন সময় রাক্ষস রাজপুত্রের নিকট ক্ষমা চেয়ে বলল, “রাজপুত্র! আমি তোমাকে একটা যাদুর আংটি দেব। তুমি আমাকে ছেড়ে দাও”।
রাক্ষসের কথা মত রাজপুত্র রাজী হল, আর রাক্ষসও তার যাদুর আংটিটা রাজপুত্রকে দিয়ে দিল। তারপর রাক্ষসকে ছেড়ে দেওয়া হল।
রাজপুত্র মনে মনে ভাবল, মায়ের আশীর্বাদ কত যে ভাল। এ পৃথিবীতে মায়ের আশীর্বাদের মত মহৎ জিনিস আর নেই। তারপর রাজপুত্র হাঁটতে হাঁটতে সেই ধনী রাজার দেশে পৌছল। তখন রাজকন্যা থামি বুনছিল।
আর অপর দিকে অন্য দেশ থেকেও একজন নকল রাজপুত্র রাজকন্যাকে বিবাহ করার জন্য আসল। এদিকে রাজা ও রাণী আগত দুই জন পাত্রী প্রার্থীর চরিত্র পরীক্ষার জন্য দুই জনকে খেতে দিল। তখন গরীব রাজপুত্র মুখে ভাত পুরে দেওয়া মাত্রই বমি করে ফেলল।
তা দেখে রাণী ভীষণ রেগে গেল। আর এ দিকে অন্য দেশের নকল রাজপুত্র ভালভাবে ভাত খেয়ে সুন্দরভাবে প্লেট ধুয়ে নিল। তা দেখে রাণী খুব খুশী হল এবং তার সাথে মেয়ের বিবাহ দিতে রাজী হল।
কিন্তু রাজকন্যা রাজী হলনা। সে গরীব রাজপুত্রকে পছন্দ করল এবং মাকে বলে দিল, “যে খারাপ আচরণ করে সে ভাল মা। আর যে বেশী ভাল আচরণ দেখায়, সে প্রকৃতপক্ষে খারাপ।” রাজকন্যার কথা মত রাণী মা রাজী হল।
এদিকে রাজকন্যা গরীব রাজপুত্রকে গোসল করতে ডাকল। গরীব রাজপুত্র বলল, “আমি গোসল করব না। আমরা তো গরীব। কখনও সাবান দিয়ে আমরা গোসল করিনি, বরং তুমি একাই যাও”। এদিকে ধনী রাজপুত্র অর্থাৎ নকল রাজপুত্রকে তো বলতে হয় না।
সে নিজে একাই সাবান নিয়ে ঘাটে গোসল করতে গেল। এভাবে গরীব রাজপুত্র দুই তিন সপ্তাহ গোসল করল না। তা’ দেখে একদিন রাজকন্যা রাজপুত্রকে গোসল করার জন্য ঘাটে নিয়ে গেল। তারা যখন গোসল করল তখন রাজকন্যা ধীরে ধীরে সুন্দর হতে লাগল।
তা দেখে রাজপুত্রও ক্রমশ সুন্দর হতে লাগল। রাজকন্যার চেয়ে রাজপুত্র আরও সুন্দর হল। রাজকন্যা প্রাসাদে গিয়ে বাবাকে বলে দিল সে রাজপুত্রকে বিয়ে করবে। একথা শুনে রাজা খুশী হল এবং রাজপুত্রকে রাজা ডেকে বলল, আমার কথামত তোমাকে কাজ করতে হবে, যদি তা সফল হয়, তাহলে আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিবাহ দেব”।
রাজপুত্র রাজাকে জিজ্ঞাস করল, “কি কাজ মহারাজ”। তখন রাজা বলল, “এক ও আমার জন্য বড় রাজপ্রাসাদ বানাতে হবে,দু্ি চারদিকে ফুলের বাগান ও পুকুর নির্মাণ করতে হবে, আর তিনঃ বড় রাজপ্রাসাদের চারদিকে সব ধনুক যেন থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
শর্তসমূহ এক রাতের মধ্যে সম্পাদন করতে পারলেই তুমি আমার মেয়েকে পাবে। এশর্ত অনুসারে কাজ করতে না পারলে, তোমাকে মেরে ফেলা হবে। এদিকে নকল রাজপুত্র ভয়ে তার নিজ দেশে ফিরে গেল।
রাজপুত্র রাক্ষসের দেওয়া যাদু আংটি দিয়ে বড় রাজপ্রাসাদ, চারদিকে ফুলের বাগান ও পুকুর, আর বড় রাজপ্রাসাদের চারদিকে ধনুক তৈরী করে ফেলল। তা দেখে রাজা তার চাকর ও মন্ত্রীদেরকে ডাকল।
ডেকে রাজপুত্রের সাথে তার কন্যাকে বিয়ে দিল। বিয়ে দেওয়ার পর রাজা তার কন্যার ও তার জামাই রাজপুত্রকে তার প্রাসাদে থাকার জন্য বলে দিল। রাজার কথা মত রাজপ্রাসাদে তারা সুখে জীবন যাপন করতে লাগল।
একদিন রাজকন্যা ও রাজপুত্র গোসল করতে গেল ঘাটে। তখন রাজপুত্র তার যাদু আংটি ঘাটে রেখে গোসল করল। প্রাসাদে ফিরে যাওয়ার সময় আংটি নিতে ভুলে গেল। তা রাজকন্যা পেল, পেয়ে তার বাবাকে রাজপুত্রের যাদু আংটিটি দিয়ে দিল।
এদিকে তখন সমস্ত রাজপ্রাসাদ ও চারদিকের ফুলের বাগান, পুকুর, রাজপ্রাসাদের চারদিকে রক্ষিত ধনুক হারিয়ে গেল। এদিকে রাজপুত্র এসে দেখল, তার হাতের যাদু আংটি নেই, ঘাটে গিয়ে দেখল, যাদু আংটি ঘাটেও নেই।
যখন সে বাড়ী ফিরে আসল। তখন রাজা আবার রাজপুত্রকে ডাকল। ডেকে বলল,তোমার তৈরী জিনিস সব হারিয়ে গেছে। আবারও তোমাকে তৈরী করতে হবে, আমি এবার তোমাকে এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি।
সাত দিনের ভেতর আগের মত সব জিনিস তৈরী করে দিতে হবে। না হলে তোমাকে হত্যা করা হবে।” এদিকে রাজপুত্র চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া ভুলে গেল। আর বাকী তিন দিন মাত্র।
কোন উপায় না দেখে সে বাড়ীর দিকে রওনা দিল। আবার সেই আগের বট গাছে পৌছল। পৌছে সেখানে আবার বিশ্রাম নিল। রাজপুত্রকে দেখে রাক্ষস আবার আসল।
এসে রাজপুত্রকে জিজ্ঞাস করল, তুমি এভাবে ফিরে আসছ কেন? তখন রাজপুত্র সমস্ত ঘটনা রাক্ষসকে বলে দিল।
রাক্ষস পুনরায় রাজপুত্রকে একই আংটি দিয়ে বলে দিল, “যখন ঘাটে রাজা গোসল করবে তখন এ যাদু আংটি। দিয়ে স্বর্ণালংকার তৈরী করে দেবে। তা দেখে রাজা যখন মুগ্ধ হয়ে জ্ঞান হারাবে তখন রাজার কাছ থেকে তোমার যাদু আংটি নিয়ে ফেলবে।”
তখন রাজপুত্র খুশী হয়ে রাক্ষসের কথা মত কাজ করতে চলে গেল। যখন রাজা গোসল করতে গেল তখন গাছের নিচে গিয়ে যাদু দিয়ে স্বর্ণালংকার তৈরী করে ফেলে দিল।
তা দেখে রাজা অবাক হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। তখন রাজপুত্র রাজার কাছ থেকে তার যাদু আংটিটি নিয়ে ফেলল। পরে রাজা উঠে জিজ্ঞাস করল, “কে এ কাজ করেছে?”
তখন রাজপুত্র বলল, “আমি এ কাজ করেছি। তখন রাজা আবার জিজ্ঞাস করল, “কে তুমি”? রাজপুত্র বলল, “আমি আপনার জামাই রাজপুত্র”। তখন রাজপুত্র রাজাকে বলে দিল, শশুর “আপনি বাড়ী ফিরে দেখুন, আপনার রাজপ্রাসাদ আগের মতই তৈরী করা হয়েছে।”
রাজা গিয়ে দেখতে পেল, সত্যি আগের মত তার প্রাসাদ। প্রাসাদের চত্বরে ফুলের বাগান, ধনুক দেখে রাজা খুশী হয়ে রাজপুত্রকে আর কষ্ট দিল না। তখন রাজা তার অর্ধেক ধন-সম্পদ রাজপুত্র ও রাজকন্যাকে দান করল।
রাজা বলে দিল, বাড়ীতে গিয়ে রাজপ্রাসাদে মাকে নিয়ে আসতে। রাজার কথা মত রাজপুত্র তার মাকে প্রাসাদে নিয়ে আসল। রাজপুত্র শ্বশুর-শাশুড়ী, মা ও রাজ কন্যাকে নিয়ে সুখে-স্বচ্ছন্দে বাস করতে লাগল।
লেখক: চামপয় ম্রো