
সেই পুরাকালের কথা। এক দেশে ছিল এক তাকুই (কুকুর) ও তলিপ (কচ্ছপ)। তাদের ছিল গলায় গলায় ভাব।
একদিন জুম থেকে ফেরার পথে তারা ছোট ছোট মারবেল আকারের গুডগুট্যা ফলের বৃক্ষ দেখতে পেলো কুকুর বন্ধুটি গাছে উঠে গুডগুট্যা ফল পেড়ে নিলো।
কচ্ছপটি নিচে ফল ফেলে দেওয়ার জন্য বন্ধু কুকুরকে অনুরোধ করলো। কুকুর বন্ধু কচ্ছপের কথা মতো একটা দুইটা করে নিচে গুডগুট্যা ফল ফেলে দিলো।
এমনি করে কুকুরটি পেট ভরে ফল খেয়ে গাছ থেকে মাটিতে নামলো। পরবর্তী দিনেও একইভাবে কুকুরটি ফল খাওয়ার উদেশ্যে গাছে উঠলো।
কচ্ছপটি তাকে বৃক্ষের উপর নিয়ে যাওয়ার জন্য কুকুরকে বারবার অনুরোধ করলো। তাই কুকুরটি কচ্ছপটিকে একটা কেরাকবেত কেটে আনতে বললো এবং তা পিঠে করে বেঁধে গাছের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলল। কচ্ছপটি কুকুরের কথায় কেরাকবেত আনল।
তখন কুকুরটি কচ্ছপটিকে কেরাকবেত দিয়ে বেঁধে গাছের ডাল ঝুলিয়ে দিলো। বৃক্ষের নিচে ছিল এক বোকা শূকর। নিচে শূকরকে দেখে কচ্ছপ বললো – বন্ধু শূকর তুমি সরে দাঁড়াও। আমি তোমার উপর পড়ে গেলে তুমি মারা যাবে।
শূকর কচ্ছপের কথায় কর্ণপাত করলো না। কচ্ছপটি ঝুলতে ঝুলতে একসময় কেরাকবেত ছিঁড়ে শূকরের পিঠের উপর পড়লো। তাতে শূকরটি মারা গেল।
এরপর কচ্ছপটি শূকরের দাঁতগুলো নিয়ে চলে গেল এক অজানা প্রান্তরে। হাঁটতে হাঁটতে কচ্ছপটি একটি গ্রামে পৌঁছে গিয়ে চিৎকার করে বললো –
-“ক্লিংশ্নিঙ্গ্যা সই দকদক, ক্লিংশ্নিঙ্গ্যা সই দকদক, আংকা উইক্লিং পালাও লক।”
তারপর আবার হাঁটতে শুরু করলো। এ কথা শুনে তাক্লা লা (কাঠ ঠোকরা) পাখিটি বললো – কী হে বন্ধু, আগে তো তোমার মুখ থেকে এভাবে শুনি নি। আজ এ কথার অর্থ তো বুঝিনি! তুমি আমায় বলোনা গো শুনি।
– আমি উইক্লিং পালাও পেয়েছি।
– তাহলে আমায় দেখাওনা ভাই।
-না দেখাবো না। দেখলে তুমি নিয়ে ফেলবে। তোমার পাখিা আছে তুমি উড়তে পারো।
তখন কচ্ছপটি সাতটি ‘পের’ (কোলা)বানিয়ে গায়ে মুড়িয়ে নিলো, যাতে কেউ শূকরের দাঁত কেড়ে নিতে না পারে। তখন হাঁটতে হাঁটতে কচ্চপ আবার বললো –
– ক্লিংশ্নিঙ্গ্যা সই দকদক, ক্লিংশ্নিঙ্গ্যা সই দকদক,
আংকা উইক্লিং পালাও লক।”
কাঠ ঠোকরা আবার বললো – কচ্ছপ তোমার উপর পের থাকতেই আমি শুনি না।
তুমি একটা ‘পের’ ফেলো না ভাই।
সে কাঠ ঠোকরার কথা মতো একটা “পের’ ফেলে দিলো। কাঠ ঠোকরা একই কথা বলে আবার একটি ‘পের’ ফেলতে বললো।
এমনি করে কাঠ ঠোকরার কথায় কচ্ছপটি সব ‘পের” ফেলে দিলো। অমনি সুযোগ বুঝে কাঠ ঠোকরা কচ্ছওপের হাত থেকে শূকরের দাঁতগুলো কেড়ে নিয়ে দূরে উড়ে গেলো।
কচ্ছপটি আর কি করে। সে মনের দূঃখে শুকরের দাঁত খুঁজতে কাঠ ঠোকরার পিছু নিল। হাঁটতে হাঁটতে সে রোয়াতাঙ (গো শালিক) – এর বাসায় পৌঁছলো। তখন রোয়াতাঙ ডিমে তা দিচ্ছিলো এরায়াতাঙ ডিম ছিলো ৬০ টি।
রোয়াতাঙকে দেখে কচ্ছপ অনুরোধ করলো – রোয়াতাঙ ভাই, তুমি আমার উইক্লিং পালাও কাঠ ঠোকরার কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসো।
কাঠ ঠোকরা আমার “উইক্লিং পালাও” কেড়ে নিয়ে উড়ে গেছে। আমার কোনো পাখা না থাকাতে উড়তে পারছি না। তোমার তো সুন্দর পাখা আছে। সত্যিই তুমি আমার উইক্লিং পালাও উদ্ধার করে এনে দিতে পারবে। আমি তোমার ডিমে তা দিয়ে দেবো।
– না না অসম্ভব তুমি এ কাজ করতে পারবে না। আমার ৩০ টি ডিম ভেঙ্গে যাবে।
– না ভেঙ্গে যাবে না, আমি পারবো রোয়াতাঙ ভাই।
তার কথা বিশ্বাস করে রোয়াতাঙ উড়ে গেলো কচ্ছপের উইক্লিং পালাও আনতে। এদিকে একটি হরিণ এসে কচ্ছপকে বললো –
– তুমি এভাবে ডিমে তা দিওনা।
রোয়াতাঙ হাংদুই তেও সুংকম ওয়াই সুংকম
হতেও প্রেত হতেও প্রেত।
অর্থাৎ শালিকের ৩০টি ডিম ভাঙবো, রয়ে যাবে ৩০ টি। এভাবে হরিণের কুবুদ্ধিতে কচ্ছপটি রোয়াতাঙ (শালিক) – এর ডিমে তা দিতে লাগলো। আর এমনি করে ৬০ ডিমের সব ডিম ভেঙ্গে দিলো।
এদিকে রোয়াতাঙ শূকরের দাঁত নিয়ে ফিরে এসে দেখলো কচ্ছপ তার সব ডিম ভেঙ্গে দিয়েছে। শালিকটি তার ডিমগুলোর এমন অবস্থা দেখে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বললো – “ তুমি আমার সব ডিম ভেঙ্গে দিয়েছো কেন?
– হরিণ আমাকে ৩০টি করে দুইবার ডিম ভাঙ্গতে বলেছে তাই করলাম। এভাবে ভাঙ্গলে নাকি শীঘ্রেই ডিম ফুটে বাচ্চা ফুটে বেরুবে।
শালিকটি কচ্ছপের কথা শুনে ভীষণ রেগে গেল, আর বললো – আমি তোমাকে উইক্লিং পালাও দেবো না। আমার সব ডিম ফিরিয়ে দিলে উইক্লিং পালাও দেবো।
কচ্ছপটি নিরুপায় হয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডিম দিতে শুরু করলো। ডিম দিতে দিতে ৩০টি ডিম পরিশোধ হলো। এদিকে শালিক সম্পূর্ণ ডিম চায়। কচ্ছপটি ডিম দিতে দিতে অবশেষে জরায়ু বের হয়ে মারা গেল।
লেখকঃ সিংইয়ং ম্রো
তথ্যসূত্রঃ ম্রো রূপকথা, লোককাহিনী ও কিংবদন্তি