
বনযোগীছড়া কিশোর কিশোরী কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে থাকা সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীলতা চর্চার প্রতিষ্ঠান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের চরম প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই কখনো ব্যক্তিগত কখনও বা সমষ্টিগত উদ্যোগে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে এসব সৃষ্টিশীল প্রতিষ্ঠান।
‘বনযোগীছড়া কিশোর কিশোরী কল্যাণ সমিতি‘ – এমনই এক সৃজনশীলতা আর সাহিত্য চর্চার অসাধারণ সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল এক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন।
রাঙ্গামাটি জেলা শহর থেকে নৌ পথে কয়েক ঘন্টা দূরত্বের উপজেলা জুরাছড়ির এ সংগঠনটি প্রায় দেড় দশক ধরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল কাজ করে যাচ্ছে যা সমগ্র জুম্ম সমাজ ব্যবস্থার জন্য হতে পারে এক আলোর দিশারী।
জুমজার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক আপনাদেরকে সংক্ষেপে জানাচ্ছেন এই সমিতি প্রতিষ্ঠার পেছেনের কাহিনী যার অধিকাংশ তথ্যই এই সংগঠনটির অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে।
১৯৯৯ইং সালে বনযোগী ছড়ায় স্কুল পড়ুয়া একদল কিশোর-কিশোরীর উদ্যোগে ‘বনযোগীছড়া কিশোর-কিশোরী কল্যাণ সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমিতির সৃষ্টির পর অনেক প্রতিকুলতা দেখা দেয়। কিন্তু দিশেহারা না হয়ে দৃঢ় আত্নবিশ্বাসের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে থাকে কিশোর-কিশোরী দল।
অতপর সকলের একানত্ম প্রচেষ্টায় ২০০১সালে বিজু উপলক্ষে ‘রানজুনি’ নামে প্রথম বৈসাবি সংকলন প্রকাশিত হয়।
তারই ধারাবাতিকতায় ‘বনযোগীছড়া কিশোর কিশোরী কল্যাণ সমিতি’ প্রতি বছর বৈসাবি সংকলন প্রকাশ করে আসছে।
সেই সাথে আদিবাসী সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে বিভিন্ন বইও প্রকাশ করে আসছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়।
২০১২ সালে বনযোগীছড়ায় একটি পাঠাগার চালু হয়। বর্তমানে অনেক লোক ও ছাত্র-ছাত্রী পাঠাগারে বই পড়ার সুবিধা ভোগ করছে। অনেক কিশোর-কিশোরীর বিভিন্ন বই পড়ার শখ আছে কিন্তু বই কেনার সামর্থ্য নেই।
আজ তারা পাঠাগারে আসে শখের বই পড়তে। শুধু বই নয়, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক পত্রিকাও রাখা হয়েছে।
তাই আজ বনযোগীছড়ার ছেলেমেয়েরা শুধু বনযোগীছড়ার মধ্যেই নয়, তারা বিশ্বকে জানতে পারতেছে, জানতে পারতেছে নিজেদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের সংস্কৃতিকেই ঠিকিয়ে রাখতে হবে আর সংস্কৃতিকে ঠিকিয়ে রাখতে হলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
আর শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হলে দরকার শিক্ষার পরিবেশ। আর সেই পরিবেশটুকু সৃষ্টির জন্যে বিভিন্নভাবে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বনযোগীছড়া কিশোর কিশোরী কল্যাণ সমিতি।
banajogichara.org হচ্ছে সংগঠনটির নিজস্ব ওয়েবসাইট। চাইলে পাঠক আপনারা ভিজিট করতে পারেন।
‘বনযোগীছড়া’ একটি ছড়ার নাম হলেও একটি এলাকার নাম হিসেবে পরিচিত। কারণ নামকরণের পিছনে পুরানো ইতিহাস জড়িত রয়েছে। অনেক বছর আগে এই এলাকার মধ্যে একটি ছড়া ছিল এবং ছড়ার পাশে একটি আদিবাসী গ্রাম ছিল। গ্রামে ’বন্যোগী’ নামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল।
সেই আদিবাসী সম্প্রদায় এবং ছড়ার নামানুসারে ’বনযোগীছড়া’ নামকরণ হয়। বনযোগীছড়া রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত জুরাছড়ি উপজেলায় অবস্থিত একটি ইউনিয়নের নাম।
বনযোগীছড়া দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া একটি এলাকা হলেও এখানকার লোকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ধাপে ধাপে সর্বাত্নকভাবে অগ্রসর হচ্ছে, যা নতুন প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের এগিয়ে চলার জন্য আত্নবিশ্বাস যোগাচ্ছে।
‘বনযোগীছড়া কিশোর কিশোরী কল্যাণ সমিতি‘ র চেতনা হল- ‘হাজার লোকের মেধায় গড়া, মোদের এই বনযোগীছড়া’।
প্রিয় পাঠক, সরকার এবং সমাজের নেতৃবৃন্দের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই সংগঠনগুলো হতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা পুরো বাংলাদেশের এক অন্যতম মডেল।
তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ, সংযোগ তথাপি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রকৃত ও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা এবং সহযোগিতা সংগঠনটিতে অন্য মাত্রা এনে দিবে বলে জুমজার্নাল বিশ্বাস করে; যার সুফল পাবে শুধু বনযোগী ছড়া কিংবা জুরাছড়িবাসী নয় বরং সমগ্র জুম্ম জাতি।
“বৈচিত্র্যময় হোক পৃথিবী”
জুমজার্নাল প্রতিবেদন।