
এক গভীর জঙ্গলে বাস করতো ভিরেজ (ফিঙে), কাক আর চড়ুই পাখি। এরা ছাড়া অন্যান্য পাখিরা আসলেও তারা ঘুরেই আবার চলে যেতো। এখন এই তিন জাতীয় পাখি থেকে ভিরেজরা হলো তাদের রাজা। কিন্তু কাকেরা ভিরেজকে তাদের রাজা হিসেবে মেনে নিতে পারছেনা। এমনকি কথাও পর্যন্ত শুনতোনা তার কারণ ভিরেজ রাজা কাকদের চেয়ে চড়ুই পাখিদেরকে বেশী ভালোবাসতো, আদর করতো, স্নেহ করতো। যার কারণে, চড়ুই পাখিদের ডিম ছানা ভেঙ্গে দিলে, নষ্ট করে দিলে রাজা কিছুতেই সহ্য করতে পারতো না। আর কে বা কার অধীনে থাকতে চাইবে। তাই তারা প্রতিরোধের ঝর মনের মধ্যে গেঁথে রাখলো। একদিন সে ঝড় বিস্ফোরণ হয়ে শুরু হলো দু-পক্ষের দ্বন্ধ এবং পরে রীতিমত যুদ্ধ। সেটা যেমন – তেমন যুদ্ধ নয় একেবারে পাহাড় পর্বত, গিরি শৃঙ্গ কেঁপে যাওয়ার মত যুদ্ধ। তাদের ভয়ানক যুদ্ধ দেখে চড়ুই পাখিরা বিরাট চিন্তায় পরে গেলে কি করবে তারা। কি বা তাদের করণীয়।যার কারণে তারা একদিন মিটিং-এ বসলো, মিটিং-এ তারা সিদ্ধান্ত নিলো কাকদের পক্ষ নেবে। তার কারণ ভিরেজদেরকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিতে পারলেই রাজার অধীনতা থেকে তারাও রক্ষা পেয়ে যাবে। তাই যেমন কথা তেমন কাজ করে যুদ্ধে নেমে গেলো। এখন যুদ্ধটা আগের চেয়ে আরো ভয়ানক রূপ ধারণ করলো দুর্ভাগ্যবশত ভিরেজরা যুদ্ধে হেরে গেলো।
যুদ্ধে যখন হেরো গেলো রাজা তখন চিন্তা করতে লাগলো যাবার আগে একটু চড়ুই পাখিদেরকে উপকার করে যাই। তাই যুদ্ধ থামিয়ে রাজা কাকদেরকে বললো বন্ধুগণ, যাবার বেলায় তোমাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, জানিনা তা রক্ষা করবে কি না। তারপর কাকেরা বলে উঠলো ঠিক আছে বলে দেখুন। তাদের সাড়া পেয়ে এবার রাজা বললো চড়ুই পাখিরা তোমাদের থেকে ছোট, অসহায় তাই তাদেরকে যদি তোমরা স্নেহ যত্ন করো তাহলে আমি খুবই খুশী হবো।
অপরদিকে কাকেরাও চিন্তা করে দেখলো, যাবার বেলায় রাজা যখন অনুরোধ করছে, তাই তারা রাজী হয়ে গেলো। এবার কাকদের যখন কথা পেলো তখন রাজা আর দেরী না করে সহসা তার দলবল নিয়ে এই জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে গেলো। ভিরেজরা যখন চলে গেলো, তাদের কি যেন আনন্দ। কিন্তু দিন কয়েক পেরিয়ে যেতে না যেতেই কাকেরা আবার পুরানো স্বভাব বের করলো চড়ুই পাখিদের উপর। সবসময় ঝগড়া করতো চড়ুইদের সাথে। যাকে দোষী হিসেবে পেতে, তাকে মেরে ফেলতে লাগলো কিন্তু ছোট জাত, তারা কি করবে। বলে কলে তাদের সাথে পারছেনা। তবুও বাঁচার জন্য প্রতিরোধ করে যাচ্ছে কাকদের থেকে রেহাই পাবার জন্য। সে জন্য চাকমাদের প্রবাদ হিসেবে আছে – “চড়ুইদের পালানো, আর কাকদের তাড়ানো”।
লেখকঃ বিধায়ক চাকমা (নবম শ্রেণী)